সমাস বিড়ম্বনা-১

দ্বিগু সমাস এবং সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাসের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা!
দ্বিগু সমাস : পূর্বপদে সংখ্যাবাচক এবং পরপদে সমাহার বা সমষ্টিযোগে যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন: সপ্তাহ= সপ্ত অহের সমাহার (দ্বিগু সমাস), তদ্রুপ- পঞ্চনদ, চৌরাস্তা, শতাব্দী, ত্রিফলা… ইত্যাদি সব দ্বিগু সমাস কিন্তু চৌচালা, দোচালা, একগুঁয়ে, তেপায়া, দ্বিপদী…. সমস্তপদগুলোর পূর্বপদে সংখ্যাবাচক হলেও এগুলো কিন্তু দ্বিগু সমাস নয় বরং সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি। তাহলে চিনবো কিভাবে?

সহজে চেনার উপায়:
দ্বিগু সমাসের সমস্তপদ হবে বিশেষ্য; যেমন চৌরাস্তা, শতাব্দী, ত্রিফলা । অন্যদিকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাসে সমস্তপদ হবে সবসময় বিশেষণ। যেমন: চৌচালা, দোচালা, একগুঁয়ে বিশেষণ পদ। আশা করি আপনারা বিভ্রান্তি এড়াতে সক্ষম হবেন।

উপপদ তৎপুরুষ ও বহুব্রীহি চেনার উপায়:
উপপদ তৎপুরুষ ও বহুব্রীহি সমাসের মধ্যে কিছুটা মিল থাকার কারণে আপনারা বিভ্রান্ত হতে পারেন; তাই শর্টকাট একটা নিয়ম আপনাদের জন্য। উভয় সমাসই সাধারণত ব্যক্তিবাচক হয় কিন্তু উপপদ তৎপুরুষের শেষে ক্রিয়াবাচক একটা ধাতু থাকবে; যেমন- পকেটমার, যাদুকর, কুম্ভকর, পঙ্কজ (মার, কর, অজ এগুলি ক্রিয়ার ধাতু) অন্যদিকে বহুব্রীহি সমাস অনেকাংশে ব্যক্তিবাচক হলেও ক্রিয়াবাচক শব্দ থাকবে না। যেমন-নীলাম্বর, বেহায়া, বেওয়ারিশ ইত্যাদি।

(ন-ঞ তৎপুরুষ ও ন-ঞ বহুব্রীহি) চেনার উপায়:
উভয় সমাসেই পূর্বপদে নঞ/নিষেধার্থক অব্যয় ব্যবহৃত হয় বিধায় আপনারা এখানেও বিভ্রান্ত হতে পারেন; তাই শুধু একটা নিয়ম আপনাদের জন্য। ন-ঞ তৎপুরুষ কখনো ব্যক্তিবাচক হবে না; যেমন-নয় ধোয়া=আধোয়া, নেই খুঁত=নিখুঁত তদ্রুপ অক্ষত, বেআইনি, গরহাজির, অবিশ্বাস, অসত্য, অপর্যাপ্ত, অনাশ্রিত ইত্যাদি। অন্যদিকে ন-ঞ বহুব্রীহি সাধারণত ব্যক্তিবাচক হয়; যেমন- নেই হায়া যার= বেহায়া, তদ্রুপ বেওয়ারিশ, বেপরোয়া, বেরসিক, বেহিসাবি, বেইমান ইত্যাদি।

পূর্বপদে অব্যয়যুক্ত হয়ে যে সমাস হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে । যেমন: আমরণ= মরণ পর্যন্ত (অব্যয়ীভাব সমাস)। ‘আ’ অব্যয়টি মনে রাখলেই এ সমাস চেনা যাবে। তাই আমরা অব্যয়ীভাব সমাস চিনবো মাত্র একটি লাইন মুখস্থ করেই। লাইনটি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ পথশিশুদের জন্য উৎসর্গ করা যেতে পারে (সংগ্রহীত)। যেমন:
”আহা নিরপরাধ বেবিদের উপকারের প্রতি যথার্থ উৎসাহ থাকা উচিত।”

আ = আকণ্ঠ, আলুনি ;
হা = হাভাত, হাঘর;
নি = নিরামিষ, নির্ভাবনা;
বে = বেহায়া, বেমানান;
বি = বিদেহ, বিজাতি
উপ = উপকূল, উপবন;
প্রতি= প্রতিবাদ, প্রতিকূল ;
যথা = যথারীতি, যথাসাধ্য;
উৎ = উদ্বেল, উচ্ছৃঙ্খল।

উপমান কর্মধারয়:
উপমান শব্দের অর্থ হচ্ছে তুলনীয় বস্তু। এ সমাসে সাধারণত দুইটি জিনিসের মধ্যে বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত তুলনা করা হয়। যেমন-তুষারশুভ্র=তুষারের ন্যায় শুভ্র; কাজলকালো=কাজলের ন্যায় কালো। এখানে তুষার সাদা তাই তুষারশুভ্র বলা যেতে পারে; তদ্রুপ কাজলের রং কালো বলে কাজলকালোও বলা যেতে পারে; যা নিতান্তই বাস্তবসম্মত। এ ধরণের তুলনা হলে উপমান কর্মধারয় সমাস হবে।
চেনার উপায়: ১) বিশেষ্য+বিশেষণ অর্থাৎ পূর্বপদ ও পরপদে যথাক্রমে বিশেষ্য+বিশেষণ থাকবে;
২) তুলনীয় বস্তুর সাধারণ গুণ বা ধর্মের উল্লেখ থাকবে।

উপমেয় কর্মধারয় :
দুইটি জিনিসের মধ্যে যাকে তুুলনা করা হয় তাকে বলা হয় উপমেয়। এক্ষেত্রে তুলনা হলেও তা বাস্তবসম্মত হয় না। যেমন- চক্ষুলতা= চক্ষু লতার ন্যায়, মুখচন্দ্র=মুখ চন্দ্রের ন্যায়; যা বাস্তবসম্মত তুলনা নয়।
চেনার উপায়: ১) বিশেষ্য+বিশেষ্য; অর্থাৎ পূর্বপদ ও পরপদ দুটোই বিশেষ্য বা বিশেষ্য সমভাবাপন্ন পদ হবে; ২) একটি প্রত্যক্ষ আর একটি পরোক্ষ বস্তু হবে। যেমন চক্ষু ও মুখ প্রত্যক্ষ এবং লতা ও চন্দ্র পরোক্ষ;
৩) তুলনীয় বস্তুর সাধারণ গুণ বা ধর্মের উল্লেখ থাকবে না।
★ উপর্যুক্ত বর্ণনার প্রেক্ষিতে আপনারা বলুন ”পুরুষসিংহ” কোন সমাস?
১) উপমান কর্মধারয়;
২) উপমেয় কর্মধারয়।

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 8 =