বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করার কৌশলঃ আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

অভিজিৎ বসাক
বিসিএস ( প্রশাসন)
৩৩তম বিসিএস

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভাল করার জন্য প্রশ্নের মান-বণ্টনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। প্রস্তুতি নেবার শুরুতেই কতটুকু সময় নিয়ে আপনি এই বিষয়ে প্রস্তুতি নেবেন তা ঠিক করে নিন। এরপর বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালমতো দেখে নিতে হবে। এতে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে আপনার একটি ধারণা তৈরি হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে তুলনামূলক কম নম্বর থাকলেও প্রচুর তথ্য মাথায় রাখতে হয়। ফলে অনেক সময় পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তে হয়।

তাই অনেকগুলো বিষয় হালকা-ভাবে না শিখে, তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালমতো শেখা উচিত। বৈশ্বিক ইতিহাস ও সভ্যতা অংশটুকু নবম দশম শ্রেণীর- “বাংলাদেশ ও বিশ্ব-পরিচয়” এবং “বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা” বইদুটি থেকে পড়তে পারেন। তবে এই দুই বইয়ের সবটুকু কিন্তু আপনার পড়ার প্রয়োজন নেই। এই বই দুটি থেকে সিলেবাসে যে যে টপিক আছে সেটুকু শিখে ফেলতে হবে। সাথে একটি ভাল গাইড বইও রাখতে পারেন। গাইড বইয়ে বিভিন্ন তথ্য কম্পাইল করা আছে। ফলে পুনরায় পড়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

বিগত বছরের প্রশ্ন ভাল করে লক্ষ্য করে দেখবেন- মানব সভ্যতার ইতিহাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ব্যক্তিত্ব আছে যেগুলো থেকে প্রায়ই প্রশ্ন করা হয়। যেমন- সভ্যতার বা স্থানের ক্ষেত্রে- মেসোপটেমিয়া, মিশরীয় সভ্যতা, হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো, হোয়াংহো নদী, নীল নদ ইত্যাদি ; ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে নেপোলিয়ন, অ্যালেকজান্ডার, ইত্যাদি। এসব তথ্যগুলো সবার প্রথমে শিখে নেবেন। এরপর প্রস্তুতির অগ্রগতির উপর নির্ভর করে যত বিষয় কাভার করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে।

বিশ্বের সাম্প্রতিক ও চলমান ঘটনাপ্রবাহের জন্য ভাল একটি মাসিক কারেন্ট ম্যাগাজিন থেকে শিখতে পারেন। যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেগুলোকে লাল বা সবুজ কালি দিয়ে মার্ক করে রাখতে পারেন। এগুলো নোট করলে সময় নষ্ট হয়। তাই নোট না করাই ভাল। এর পাশাপাশি, এই ধরণের বিষয়গুলোর সাথে আপ টু ডেট থাকার জন্য আপনি পত্রিকা বা ভাল দু তিনটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। এখন দেখবেন অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো ডেক্সটপ নোটিফিকেশনের ব্যবস্থাও রেখেছে। ফলে আপনি চাইলে খুব সহজেই এসব বিষয়ে খবর রাখতে পারবেন। ডয়েচ ভেল বাংলা, বিবিসি বাংলার মত ভাল কিছু পোর্টাল বাংলাতেই আছে। আর এই পোর্টালগুলো বিশেষ বিশেষ সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে পয়েন্ট আকারে ফিচার করে। এসব ফিচারে ৫ মিনিট চোখ বুলালেই আপনি বিষয়টি মাথায় রাখতে পারবেন। এদের ওয়েবপোর্টাল ছাড়াও, এমন দু তিনটি বিদেশি বাংলা পোর্টালের ফেসবুক পেজ ফলো করে রাখতে পারেন। এতে ফেসবুকে লগিন করলেও ফিডে এই বিষয়গুলো চোখে পড়বে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও ভূ-রাজনীতি অংশে মূলত বিভিন্ন মহাদেশের বিভিন্ন অংশ, ভূমিরূপ, ভৌগলিক উপনাম, সরকার ব্যবস্থা, পুরাতন নাম-নতুন নাম, উপজাতি, এগুলো থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন মহাদেশের বিখ্যাত বন্দর, স্থাপত্য, কোন দেশ কোনটি উৎপাদনে সেরা, কোন মহাদেশের সবথেকে বড়/ছোট শহর, কোন দেশ কোন দেশের উপনিবেশ ছিল, কোন অঞ্চলের বিশেষ উপজাতি এই ধরণের প্রশ্নই বেশি আসে। তবে এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ইস্যু খুব বড় একটি বিষয়। আপনার জানেন যে- বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু একটি আলোচিত বিষয়। খেয়াল করে দেখবেন- ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় রোহিঙ্গাইস্যু নিয়ে প্রশ্ন এসেছে। এরপর চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের উপর চীন সরকার কিছু নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে পৃথিবীর বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো এটা নিয়ে নিউজ করে। এবং আপনি খেয়াল করলে দেখবেন এর ফলে বিগত কয়েকটি পরীক্ষায় উইঘুর সম্প্রদায় নিয়ে প্রশ্ন হয়েছে।ফলে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে ভাল করতে হলে- পৃথিবীর সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের উপর একটু নজর রাখলেই আপনি অনেকখানি এগিয়ে থাকবেন।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আন্তঃ-রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্পর্ক অংশটুকু ভাল একটি সাধারণ জ্ঞানের বই থেকে শিখতে পারেন। এই অংশে আসলে প্রশ্ন করার মত প্রচুর উপাদান রয়েছে। ফলে এই অংশে ভাল করতে হলে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। ইতিহাসের বিভিন্ন বিখ্যাত যুদ্ধ, গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ অঞ্চল- যেমন ভারত-পাকিস্তান-তিব্বত-চীনের মধ্যে যে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল রয়েছে সেগুলো, বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাবহার করা বিভিন্ন সামরিক ঘাটি, বিশ্বের বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, বিভিন্ন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিভিন্ন দুর্ধর্ষ গেরিলা সংগঠন, বিভিন্ন যুদ্ধবিরতি চুক্তি, ঐতিহাসিক সনদ ইত্যাদি থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে।আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতিসংঘ। তাই সবার প্রথমে জাতিসংঘ বিষয়ক জিনিসগুলো শিখে নেবেন। জাতিসংঘের উৎপত্তি, বিশেষায়িত সংস্থা, বিভিন্ন উদ্যোগ, ঘোষণা ইত্যাদি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক জোট থেকেও প্রায়ই প্রশ্ন হয়। অর্থনীতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, IDB, IMF এগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক জোটের মধ্যে BRICS তুলনামূলক অনেক নতুন জোট। BRICS খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠন। তাই এটি থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও G-8, G-20, ওপকও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি থেকেও প্রায়ই প্রশ্ন হয়। এগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু আলোচিত সংস্থা থেকেও প্রশ্ন হয়ে থাকে। প্রতিটি অধ্যায় শুরুর আগে একটি সাধারণ ধারণা নিয়ে নিতে পারলে সহজে পরিকল্পনা করতে পারবেন। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে, লক্ষ্য স্থির করে সময়কে কাজে লাগাতে থাকুন। সফলতা আসবেই।

“It’s a lie to think you’re not good enough. It’s a lie to think you’re not worth anything.” ― Nick Vujicic

লেখা সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শের জন্য আমার ফেসবুক inbox এ লিখতে পারেন। Facebook ID: Avizit Basak

বি দ্রঃ লেখাটাতে শুধু আমার নিজের আইডিয়া অনুযায়ী ধারণা দেয়া হয়েছে। আপনি আপনার মত করেও প্রস্তুতি নিতে পারেন। সফল হবার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা সম্পন্ন করাটাই মুখ্য কাজ।আর ছোটখাটো বা অনিচ্ছাকৃত কোনও ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =