একজন সফল মানুষের গল্প

ভার্সিটি থেকে শহরে যাবে, কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন নাই। নাশকতার আশংকায়, ডেমু ট্রেনটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কি আর করা, মনটা খারাপ হয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে জিরো পয়েন্টে চলে আসলাম। ভাবলাম, একটু ওয়াইফাই চালাই।
কিছুক্ষন ওয়াইফাই চালানোর পর, হঠাৎ করে পাশেই এক বড় ভাইয়ের দিকে চোখ পড়লো। চোখাচোখিও হল।
ভাইকে, কেমন জানি, চেনা চেনা লাগছে । কথা বলতে ইচ্ছে করলো।
আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, ভাইয়া, আপনাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
খুব সাবলীল ভাবেই ভাইয়ের সাথে পরিচিত হলাম।

আয়ান সরকার, ট্যাক্সে আছেন, পোস্টিং চট্টগ্রামেই , ৩৩ তম বিসিএস এ টিকেছেন।
আমি কেমন জানি, একটু লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম উনি এখানকার স্টুডেন্ট হবে।
ধীরেধীরে কথাবার্তা চলতে থাকলো। উনি চবির ০৬-০৭ সেশনের, ল’এর স্টুডেন্ট ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ নং গেটে থাকতেন। ২০১৩ সালে ভার্সিটি থেকে পাশ করে বের হয়ে গেছেন। কি যেন একটা কাজের জন্য আজ ক্যাম্পাসে এসেছেন। তখন আমার মনে পড়লো, আমিও বিশ্ববিদ্যালয় ২নং গেটে ছিলাম, প্রায় ২ বছরের মত। তখন হয়তো, ভাইকে দেখেছিলাম, কিন্তু ওভাবে ফরমালি পরিচিত হয়ে ওঠে নাই।

সুযোগ পেয়ে বিসিএস নিয়ে অনেক প্রশ্ন করলাম। কিভাবে উনি পড়াশুনা করেছেন। বিসিএস উনার স্বপ্ন ছিল কি না।
আমাদের কথা তখন জমে উঠেছে।

আয়ান ভাই বলতে থাকলেন, আমার বিসিএস দেয়াটা ওভাবে আগে থেকে স্বপ্ন ছিল না। অনার্স পরীক্ষা দেওয়ার পর, আমি অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দেই। তখন থেকেই ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নটা গ্রো করে এবং তখন থেকেই আমি নিয়মিত পড়াশুনা করি।

উনি একটু হাসি দিয়ে বললেন, তুমি গেজ কর তো। আমি তখন কত ঘন্টা পড়াশুনা করতাম। আমি হাসিমুখ করে বললাম ভাই, আপনি যেহেতু শেষ সময়ে এসে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাহলে ১৮/২০ ঘন্টা তো হবেই। উনি বললেন, এতক্ষণ কেউ পড়তে পারে না কি?
আসলে, আমি তখন প্রায় নিয়মিত ১৪ ঘন্টার মত পড়াশুনা করতাম। আমার ভাগ্য ভাল ছিল, হয়ে গেছে। কিন্তু এটাও সত্যি, আমার স্বপ্ন ছিল বিসিএস পুলিশ হওয়ার । তবে এখন যেটা হয়েছে, ভালই হয়েছে। আমি ভাল আছি।
আয়ান ভাই, আমার কথা জিজ্ঞাসা করলো। তোমার ক্যারিয়ার কোন দিকে গড়তে চাও। আমি একটু লজ্জায় পড়ে গেলাম। বললাম ভাই, জীবনে একটাই স্বপ্ন, ক্যাডার হওয়া এবং সেটা ভালভাবেই চেষ্টা করতে চাই।
উনি আন্তরিক ভাবেই বললেন, হ্যা……!

রীক্ষা দিলে ভালভাবেই দিবা। তাহলেই সফলতা পাওয়া যাবে। আমি শুধু একটু হাসি দিলাম,আর মাথা নাড়ালাম।
ভাই, হঠাৎ করেই বললেন, চলো, চা খাওয়া যাক। আমি সুযোগ টা হাতছাড়া করতে চাইলাম না। ভাবলাম, যাক ভালই হল। আরও কিছুক্ষন কথা বলা যাবে। হাঁটতে হাঁটতে পাশের চায়ের দোকানে গেলাম। চায়ের টেবিলে আবার কথা জমে উঠলো।
ভাইকে বললাম, আসলে আমাদের চবির ছেলেমেয়েরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে অনেক পিছয়ে আছে। উনি বললেন, তুমি ঠিকই বলেছে।

এখানকার পরিবেশ টা একটু অন্যরকম।
তবে ক্যারিয়ারের জন্য নিজের পরিবেশ, নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। অন্য কেউ এটা তৈরি করে দিবে না। আমিও এরকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু সব কিছুকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সাফল্য পাওয়া যাবে।
উনি নিজের একটা ঘটনা বললেন, দেখ। আমি জীবনে মাত্র ৭ টা ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ টা, বিসিএস, আর একটা জুডিশিয়াল। বিসিএস এ হওয়ার পর জুডিশিয়াল ভাইভাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ক্যাডার জানার পর, আর ওখানে হই নি।

ভাইয়ের যত কথা শুনছি, ততই আরও বেশি মুগ্ধ হচ্ছি।
কথার ফাঁকে এর মধ্যে আমি জেনে গেছি। উনি সুশান্ত দাদার সাথে বিভিন্ন জায়গায় ক্যারিয়ার আড্ডার আয়োজন করেন।
আয়ান ভাইকে বললাম, আমাদের চবিতে তেমন সেমিনার বা ক্যারিয়ার আড্ডা হয় না। এখানে কি একটা ক্যারিয়ার আড্ডার ব্যবস্থা করা যায়?

উনি একটু স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বললেন,
আমারও ইচ্ছা আছে সুশান্ত দাদাকে নিয়ে এখানে একটা ক্যারিয়ার আড্ডা করার। কথাটা শুনে ভালই লাগলো।
আড্ডা জমে উঠায়, চা এ চুমুক দিতে প্রায় ভুলেই গেছিলাম। এভাবে আরও কিছুক্ষন চা এ চুমুক আর আড্ডা চলতে থাকে। কথার মাঝখানে ভাইয়ের ফেসবুক আইডিটা আর মোবাইল নাম্বারটাও নিলাম।
অবশেষে এবার উঠার পালা।
ভাই বললেন, আমি শহরে যাব। ক্যাম্পাসে আসলে আবার দেখা হবে।

ভাইকে বিদায় জানিয়ে, চিরচেনা সেই কাঁটাপাহাড়ের রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
সফলদের স্বপ্নগাঁধা আর সাফল্যের কথা শুনতে ভালই লাগে। নিজের ভিতর একধরনের উৎসাহ কাজ করে, অণুপ্রেরণা পাওয়া যায়। যদি অণুপ্রেরণা টুকু সবসময় মাথার ভিতর থাকে। তাহলেই খুব সহজেই সাফল্য লাভ করা যাবে।
আর পৃথিবীতে কাউকে না কাউকে মশাল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে । সুশান্ত দাদা, আয়ান ভাই সেই কাজটিই করে যাচ্ছেন। তাদের বিভিন্ন ক্যারিয়ার আড্ডা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে।
ভাইয়া, আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য শুভ কামনা করবেন। যেন আমরাও সাফল্য অর্জন করতে পারি।
স্বপ্নের সারথিরা এক হয়ে, বাকি আর সবাইকে সাফল্যের স্বপ্ন দেখাতে পারি,,,,,
-শামসুজ্জোহা বিপ্লব,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − seven =