আবদুল্লাহ-আল-মামুন সাহেবের ভাইভা অভিজ্ঞতা

৩৮ তম ভাইভা অভিজ্ঞতা
আবদুল্লাহ-আল-মামুন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত (ICT)
শ্রদ্ধেয় শাজাহান আলী মোল্লা স্যার এর বোর্ড
০৯-০২-২০২০ ( একদম শেষ এর দিন টেকনিক্যাল ভাইভা দিয়েছিলাম)
সিরিয়াল – ৪ জনের মধ্যে আমিই প্রথম ( ৫ জনের মধ্যে ১ জন অনুপস্থিত ছিলো)
বিষয়ঃ কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সময়ঃ ২৫-৩০ মিনিট
বি.দ্র. নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করার পরও আমার ভাইভার টেকনিক্যাল অংশটা অনেক খারাপ হয়েছে। তাই আপনারা নিজেদের ভালোভাবে তৈরী করবেন।
বিসিএস এর প্রথম ভাইভা এমনিতেই অনেক ভয়ে ভয়ে আছি তারপর যখন দেখলাম আমিই সিরিয়াল এ প্রথম তখন গলা শুকিয়ে কাঠ। এরপর শুরুতেই খেলাম ধাক্কা। স্যার এর সহকারী আমাকে বললো আপনি ঢুকুন।
দরজা খুলে সালাম দিতেই চেয়ারম্যান স্যার জিজ্ঞেস করে আপনি ক্যান্ডিডেট?
আমি হ্যাঁ সূচক জবাব দিতেই উনি বলে আপনি না আপনি না। মাথা নেড়ে উনার সহকারীকে ঢুকতে বললেন। এর মধ্যেই আমি ৩ জোড়া চোখ দেখে ফেলেছি এবং বাইরে বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করছিলাম।
কিছুক্ষণ পর আমাকে ঢুকতে বলা হলো।
বিসমিল্লাহ বলে সালাম দিয়ে প্রবেশ করলাম।
চেয়ারম্যানঃ আপনি আবদুল্লাহ আল মামুন?
আমিঃ জি স্যার।
চেয়ারম্যানঃ জগন্নাথ থেকে পড়াশুনা করছেন। মাস্টার্স করেন নাই কেন?
আমিঃ এখন করছি স্যার।
চেয়ারম্যানঃ হুম হুম। আচ্ছা আপনার তো দেখি বোথ চয়েস ছিলো? শুধু টেকনিক্যাল এ কেন আসলো ?
আমিঃ রেজিষ্ট্রেশন করার সময় বোথ দিয়েই আবেদন করেছিলাম স্যার। কিন্তু প্রিলিমিনারীতে পাস করার পর আমি শিক্ষকতাকেই আমার ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে উপযুক্ত মনে করলাম। তাই বাংলা ২য় এবং বিজ্ঞান পরীক্ষায় শুধু অংশগ্রহণ করেছিলাম।
চেয়ারম্যানঃ আমিও তো সেটাই চিন্তা করি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে বিজ্ঞানে ফেইল করার কথা না। তার মানে তুমি শিক্ষক হতে চাও?
আমিঃ জি স্যার।
চেয়ারম্যানঃ আমি তোমাকে আর প্রশ্ন করবো না। তোমার বিষয়ের বিজ্ঞ স্যাররা আছেন উনারাই তোমাকেই প্রশ্ন করবে। এক্স-১ এর দিকে তাকিয়ে চেয়ারম্যান স্যার বললো শুরু করেন স্যার।
( স্যার এর শুরু করেন শুনে গরু কোরবানির কথা মনে পড়ে গেলো )
এক্স-১ সম্পর্কে একটু বলি। স্যারকে প্রথম দেখাতেই একটু ভয় পেয়েছিলাম। উসখোখুস্কো চুল, পরনের জামার বোতাম খোলা, রুক্ষ চেহারার মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। স্যারকে হঠাৎ দেখলে মনে হবে গত কয়েকদিন কঠিন কোন প্রোগ্রামিং এর প্রবলেম নিয়ে পড়ে ছিলেন,এখনো সমাধান করতে পারেন নাই।
এক্স-১: আপনি কত ধরনের সার্চিং জানেন?
আমিঃ উত্তর দিলাম।
(এরপর আমার সাথে যা হয়েছে আপনি শুনলে বিশ্বাস করবেন না রাসেল ভাই)
এক্স-১: complexity নিয়ে বললেন কিছুক্ষন।
(তারপর এমন সব প্রশ্ন করলেন আমি আমার ছাত্র জীবনে কখনো নামই শুনি নাই। পরে আমার মনে হলো স্যার এর নিজের কোন পাব্লিশড জার্নাল থেকে জিজ্ঞেস করছে মনে হয়)
আমিঃ টানা ৫-৬ টা প্রশ্নের উত্তর সরি স্যার বলছি। খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম।
এক্স-১: তোমার সামনে কাগজ আছে অইটা নাও। একটা ইনফিনিট লুপ লেখো।
আমিঃ এতোগুলো প্রশ্ন না পারার কারনে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। প্রথমে বুঝতেই পারি নাই কি বলছে। পরে while দিয়ে লিখে দিলাম।
এক্স-১: for লুপ দিয়ে লিখে দেখাও।
আমিঃ লিখে দিলাম।
এইবার এক্স-২ এর পালা। উনার সম্পর্কে একটু বলি। উনি এক্স-১ এর ঠিক উল্টো। খুব পরিপাটি, সূক্ষদৃষ্টি। আমি ঢুকার পর থেকেই উনি আমার ড্রেস-আপ এমনকি পায়ের দিকেও কয়েকবার তাকিয়েছেন। আমার কাগজপত্র স্যারই দেখতেছিলেন।
এক্স-২: আপনি তো স্যার এর ( এক্স-১) প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে দিতে পারেন নাই আমার গুলো দিতে চেষ্টা করুন। আপনি আমাকে যা জিজ্ঞেস করবো তার উত্তর দিবেন। এর বেশি কিছু না।
আপনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এর সঠিক তারিখ বলুন।
আমিঃ বললাম।
এক্স-২: এটা কি কাজে লাগবে আমাদের?
আমি: উত্তর দিলাম।
এক্স-২: একটা অ্যালগরিদম কি কখনো ইনফিনিট হতে পারে?
আমিঃ মনে হলো উত্তর যাই দেই না কেন এটা নিয়ে পেচানোর সুযোগ আছে। তাই সরি স্যার বললাম।
এক্স-২: অ্যালগরিদমের কিছু বৈশিষ্ঠ্য বলেন।
আমিঃ কয়েকটা বলার পর আমাকে থামিয়ে দিয়েই স্যার বললেন এসব না। আমি আবার সরি স্যার বললাম।
( চেয়ারম্যান স্যার কিন্তু পুরো সময়টা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে একবার উত্তর দিতে গেলে তিনি বলেন যিনি প্রশ্ন করেছেন তাকে উত্তর দাও)
এক্স-২: এখন সবচেয়ে পপুলার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর নাম বলেন।
আমিঃ আমি বলদের মত বলি PHP। স্যার বিরক্ত হয়ে ঝাড়ি দিয়ে বলেন পাইথন এর নাম শুনছেন?
আমি বললাম জি স্যার শুনেছি। তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন কাজ করেছি কিনা আমি বললাম না স্যার।
এক্স-১ স্যার আবার নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলেন তার দিকে তাকাতেই আবার প্রশ্নের ফুলঝুরি।
এক্স-১: 2 way authentication সম্পর্কে যা জানেন বলেন।
আমিঃ সুন্দর করে বললাম।
এক্স-১: এই যে এসএমএস টা আসে এইটা কোথা থেকে আসে। উত্তর দেয়ার পর বলে সার্ভারটার নাম কি?
আমিঃ সরি স্যার।
এতক্ষন পর চেয়ারম্যান স্যার প্লট পেলো প্রশ্ন করার।
চেয়ারম্যানঃ ব্যাংক এর কথা হইতেসে তাহলে বাবা বলোতো আমাদের যে এতোগুলো টাকা চুরি হইলো এইটা কিভাবে হলো ?
আমিঃ প্রশ্ন কমন পড়ছে। ২ দিন আগে আল জাজিরার পুরো রিপোর্ট দেখছি এইটা নিয়ে। বলতে লাগলাম হ্যাকাররা খুব প্লান করে হলিডে গুলো মাথায় নিয়েছে। এইটা বলা শেষ করতে না করতেই এক্স-১ এর ঝাড়ি। কি বলতেসে বন্ধের দিনের সাথে এই হ্যাকের পরিকল্পনার কোন সম্পর্ক নাই। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আল জাজিরার রিপোর্ট এ বন্ধের কথাটা হাইলাইট করছিলো। আমি সরি স্যার বলার পর স্যার বলে তুমি টেকনিক্যাল ব্যাপার বলো। তারপর বললাম কিভাবে কি হলো।
এক্স-১: আচ্ছা এইবার আমাকে বলো, আমেরিকাতে একজন তার কম্পিউটার এ সে পাসওয়ার্ড ইনপুট দিচ্ছে
আর তুমি বাংলাদেশ এ বসে বসে তা দেখতে পাচ্ছো। এইটা কোন সফটওয়ার দিয়ে পসিবল?
আমিঃ আমি সাথে সাথে বললাম টিম ভিউয়ার। স্যার বললেন টিম ভিউয়ার এ তুমি পাসওয়ার্ড দেখতে পাও?
আমি বললাম না স্যার। এরপর বললাম স্যার পুটি দিয়ে রিমোট একসেস করা যায়। তারপর স্যার বললেন সেটা অন্য জিনিস।
এক্স-১: সবাই জাভাকে কেন প্রেফার করে?
আমিঃ JVM এর বিষয়টা গুছিয়ে বলতে পারি নাই। স্যার ও উত্তর টা নিলেন না।
চেয়ারম্যানঃ আচ্ছা বলোতো বাংলাদেশ এ এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কতজন?
আমিঃ প্রশ্ন আবার কমন পড়ছে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বলি ৯ লাখ ৯৪ হাজার। স্যার অবাক হয়ে ৯ লাখ!!! আমি সরি বলে বলি ৯ কোটি ৯৪ লাখ।
চেয়ারম্যানঃ ২০০৮ সালে কত ছিলো?
আমিঃ জানা ছিলো না কিন্তু মনে হলো সরি বলা উচিত হবে না। বললাম ১ কোটি ৮০ লাখ।
চেয়ারম্যানঃ এই যে এতো পরিবর্তন কিভাবে হলো?
আমিঃ মনের মাধুরি মিশিয়ে বলে দিলাম সব।
চেয়ারম্যানঃ ব্যবহারকারী বাড়ার অসুবিধা আছে সেটা কি?
আমিঃ ফেইসবুক এ গুজব রটিয়ে যে কয়েকটা ঘটনা ঘটছে তা বলছি। তারপর স্যার বলে প্রতিকার কি? আমি প্রধানমন্ত্রীর উক্তি কোট করে দিলাম।
চেয়ারম্যানঃ গ্রামের মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারে কিভাবে সচেতন করবে ১ মিনিট বলো।
আমিঃ নিজের মত বললাম তারপর স্যার বলে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে একটা ভালো কাজ করতে বললে আপনি কি করবেন? তখন চীন এ করোনা হিট ইস্যু। আমি কিভাবে মানুষকে সচেতন করা যায় তা বললাম।
চেয়ারম্যানঃ তোমার ইংরেজি পরীক্ষা কেমন হয়েছিলো?
আমিঃ আশানুরূপ দিতে পারি নাই স্যার।
চেয়ারম্যানঃ রচনা কোনটা দিয়েছিলে? আমি বললাম রোহিংগা। স্যার বললেন আরেকটা ছিলো Social media নিয়ে ওইটা দিলে না কেন? তোমার সাবজেক্ট এর ইতো ছিলো। এবার বলে আরেকটা রচনা ছিলো ওইটার নাম কি? আমি ব্লু ইকোনোমি বলার পর বলে পুরো নাম বলো।
আমিঃ সরি স্যার।
চেয়ারম্যানঃ রোহিংগা টার পুরো নাম বলো।
আমিঃ সরি স্যার।
চেয়ারম্যানঃ স্যার খুব বিরক্ত হয়ে নিজে যেই রচনা লিখছো তার নামটাও মনে নাই। তুমি আসছো শিক্ষক হতে আর ৩ মাস আগের জিনিশ মাথায় নাই?
আমিঃ সরি স্যার। (মনে মনে ভাবতেসি ৩ মাস?? ১৮ মাস হইছে স্যার)
এক্স-২: স্যার ছেড়ে দেন উনাকে। আর এটাতো উনার প্রথম বিসিএস, এখনো ছোট আরো দেখুক। দিতে থাকুক।
( আমি তো মনে মনে বলতেসি হায় হায় রে কি বলে স্যার। এইটা শোনার পর আমার মনে হইছে আমি তো তাহলে পাস করার সুযোগ নাই। অনেক কষ্ট নিয়েও স্যার এর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।)
চেয়ারম্যানঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার কাগজ পত্র নিয়ে আপনি যেতে পারেন।
আমিঃ সবাইকে ধন্যবাদ আর সালাম দিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
ফলাফলঃ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত।
বি.দ্র. ভাইভার পুরোটা সময় আমার কখনোই মনে হয় নাই আমি ভালো ইম্প্রেশন তৈরী করতে পেরেছি।
চেয়ারম্যান স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে পাস করিয়ে দেয়ার জন্য।
তথ্য সুত্রঃ https://www.facebook.com/ZakirsBCSspecials/

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen + four =